নদীভাঙনে সব হারিয়ে পাগল পারুল বেগম


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ / ২৬৬
নদীভাঙনে সব হারিয়ে পাগল পারুল বেগম
Spread the love

নাম তার পারুল বেগম। চার ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস ছিল। কিন্তু নদীভাঙনে আজ তার ঠাঁই মিলেছে অন্যের জমিতে। নিজের ভিটের কাছাকাছি নদী চলে আসায় সব কিছু সরিয়ে নিয়ে গেছেন।

পারুল বেগম  বলেন, পুকুরসহ সুন্দর একটি বাড়িতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করেছি। আজ আমি সব হারিয়ে পাগল হয়ে গেছি। এখনো নিজের ভিটায় বসে আছি। এখানে রান্না করি। ঘর ভেঙে নিয়ে অন্যের জায়গায় রেখেছি। তারাও চিল্লাচিল্লি করছে চলে যেতে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।

Dhaka post

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন যেন কিছুতেই থামছে না। নিমিষেই গিলে খাচ্ছে মসজিদ-মাদরাসা-কবরস্থান, সরকারি স্থাপনাসহ হাজার হাজার পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি ও পাকা সড়ক। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ সরিয়ে নিচ্ছে ঘর-বাড়ি। অনেকেই সরিয়ে নেয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের সাদ্দাম বাজারে সপ্তাহ খানেক আগে যেখানে মসজিদ দাঁড়িয়ে ছিল তা আজ নদীগর্ভে বিলীন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী কবরস্থানও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জোয়ারের মধ্যে মসজিদের কিছু রড দেখা যাচ্ছে। সবখানে পানি থৈথৈ করছে। ভাঙনের ফলে ভিটেমাটি ছেড়ে অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Dhaka post

ভিটেমাটি হারিয়ে পাগলপ্রায় ফিরোজা খাতুন। তিনি বলেন, অমাবস্যার জোয়ারে নদী কম ভাঙে কিন্তু পূর্ণিমার জোয়ারে চোখের পলকের সঙ্গে সব বিলীন হয়ে যায়। ছেলে-মেয়েদের রাখার জায়গা নেই। তাদের অন্যের বাড়িতে রাখি।

সায়েরা খাতুন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মা আপনাকে সালাম। আমরা কাঙাল নদীর কূলে বসে আছি। নদীর ঘোলা পানি খেয়ে বেঁচে আছি। হাজার মানুষ নদীর কূলে টং দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। একটু জায়গাও কোথাও পাচ্ছি না। এক বেলার ভাতও কেউ দেয় না।

মো. শামীম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, নদীগর্ভে আমার সব চলে গেছে। এখন অন্যের জায়গায় থাকছি। সরকারের কাছে দাবি, স্থায়ীভাবে নদীভাঙন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমরা সাহায্য চাই না।

Dhaka post

সাদ্দাম বাজারের বাসিন্দা মৃত ইসমাইলের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, নদীতে মসজিদ-কবরস্থান ভেসে গেছে। বাবার কবর নদীতে ভেসে যাওয়ায় আমার মেয়ে দুইটা দরিয়ায় ঝাঁপ দিতে নিসে। মানুষ তাদের টেনে ধরেছে।

চানন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজহার উদ্দিন বলেন, সাদ্দাম বাজার মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গাটি এখন মাজারে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে গিয়ে কান্নাকাটি করছে। আল্লাহর ঘর মসজিদ যখন আল্লাহ নিয়ে যায়, তখন মানুষ হতাশ হয়ে গেছে। মানুষ মনে করে, মসজিদ থাকলে তারা বাঁচতে পারবে। নদীভাঙনের বিষয়টি আমাদের এমপি আয়েশা ফেরদাউস বার বার সংসদে তোলেন। কিন্তু আমাদের ভাগ্য খোলে না। সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সাহেব ব্যক্তি অর্থায়নে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, যদি সরকার সহযোগিতা না করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, মসজিদ বিলীন হওয়ায় আগে ও পরে আমাদের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙনের তীব্রতার কারণে আপদকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা কাজ করছি। আমাদের সাড়ে তিনশো কোটি টাকার প্রকল্প রয়েছে। তবে সেটি অনুমোদন পেলে আমরা স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে কাজ করতে পারব।

Translate »